ইউরিয়া সারের কাজ কি ও তৈরীর উপাদান গুলো জানুন

প্রিয় পাঠক আপনার নিশ্চয়ই ইউরিয়া সারের কাজ কি এ সম্পর্কে জানতে আজকের পোস্টটিতে এসেছেন। ইউরিয়া সার কি এবং ইউরিয়া সার সম্পর্কে যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকের পোস্টটিতে আমরা আপনাদের জন্য ইউরিয়া সারের কাজ কি ও ইউরিয়া সারের সংকেত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
ইউরিয়া সার তৈরির উপাদান
পোস্টসূচিপত্রঃপ্রিয় পাঠক আপনি যদি ইউরিয়া সার সম্পর্কে ও ইউরিয়া সারের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

ভূমিকা

আমরা যারা জমিতে ফসল ফলায় তাদের বিভিন্ন সময়ে ইউরিয়া সার জমিতে প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে। ইউরিয়া সারের অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আপনারা জানলে জমিতে অবশ্যই ব্যবহার করবেন। বিশেষ করে কৃষক ভাইয়েরা আপনাদের ইউরিয়া সারের কাজ কি এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত। তখনই আপনারা ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে পারবেন।ফসলের জমিতে নাইট্রোজেন ঘাটতি হলে ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে পারেন। 
কারণ ইউরিয়া সার জমিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি পূরণ করে এবং গাছের বৃদ্ধি বিকাশ করতে সাহায্য করে। যার ফলে জমিতে ফসলের ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাই আপনাদের ইউরিয়া সার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ইউরিয়া সারের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত। যা আমরা এই পোস্টটিতে গুরুত্ব সহকারে ইউরিয়া সারের কাজ সম্পর্কে আলোচনা করব। তাই আপনারা ইউরিয়া সার সম্পর্কিত বিস্তারিত জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ইউরিয়া সার কি

ইউরিয়া সার হলো নাইট্রোজেন ঘটিত সার যা ফসলের জমিতে ফসলের ফলন বৃদ্ধিতে অধিক হারে ব্যবহার করা হয়।ইউরিয়া সার খাদ্যপদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে রয়েছে নাইট্রোজেন যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি বিকাশে সহায়তা করে থাকে। এটি একটি রাসায়নিক সার। এই  সারে ৪৬ পার্সেন্ট নাইট্রোজেন রয়েছে যা জমিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি পূরণ করে এবং গাছপালা এর শিকড়ের বৃদ্ধি বিকাশে সহায়তা করে। ইউরিয়া সার মূলত কৃষি জমিতে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। যার ফলে উদ্ভিদগুলো প্রয়োজনমতো নাইট্রোজেন পাই। তাহলে বুঝে গেলেন ইউরিয়া সার কি।

ইউরিয়া সারের কাজ কি

আপনারা কি জানেন ইউরিয়া সারের কাজ কি। যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই অংশের মাধ্যমে ইউরিয়া সারের কাজ সম্পর্কে জানতে পারবেন। ইউরিয়া সার মূলত ফসলের জমিতে নাইট্রোজেনের যোগান দেয়। জমিতে নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দিলে ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে পারেন। তার আগে অবশ্যই আপনাদের জানতে হবে এই নাইট্রোজেনের অভাবে কি হয়। সাধারণত নাইট্রোজেনের অভাবে কৃষি জমিতে ফসলে ক্লোরোফিলের হার কমে যায়। 

আবার এই ধরনের নাইট্রোজেন ঘটিত পুষ্টি উপাদান এর অভাব দেখা দিলে গাছপালায় সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়। এর ফলে জমিতে ফসলের অর্থাৎ উদ্ভিদের সবুজ রং হারিয়ে যায়, বলতে গেলে সবুজ বর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়। যা গাছের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাছাড়াও গাছের আকার দিনে দিনে ছোট হতে থাকে এবং শাখা-প্রশাখা কমে যেতে থাকে। ফলে গাছপালার বৃদ্ধি হ্রাস হয়। এছাড়াও পাতায় পাতায় বিবর্ণতা দেখা দেয় এই নাইট্রোজেনের অভাবে। পাতা সবুজ বর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায় এবং পাতা হলুদভাব ও বাদামী বর্ণের হয়ে যায়। 
এর ফলে পাতা ঝরে যেতে থাকে। এরই সাথে সাথে ফুল ও ফলের আকার ছোট হতে থাকে এবং ফসলের ফলন কমে যেতে থাকে। তাহলে বুঝতে পারছেন ফসলের জমিতে নাইট্রোজেনের গুরুত্ব কতটা। আর এই নাইট্রোজেন রয়েছে ইউরিয়া সারে। তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন ইউরিয়া সার জমিতে নাইট্রোজেন মাত্রা ঠিক রাখতে ব্যবহার করতে পারবেন। এবার আসা যাক ইউরিয়া সারের কাজ যা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
  • কৃষি জমিতে ইউরিয়া সার নাইট্রোজেনের ঘাটতি পূরণ করে অর্থাৎ জমিতে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে।
  • ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হলে গাছপালা শিকড়ের বৃদ্ধি বিকাশ হয় যা মূলত নাইটোজেনের কাজ।
  • জমিতে গাছপালার পর্যাপ্ত পরিমাণ ডালপালা , পাতা ও কাণ্ড উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে।
  • এছাড়াও আপনারা যারা শাকসবজি চাষ করেন এক্ষেত্রেও শাকসবজির ডালপালা বৃদ্ধি ও পাতার সঠিক রং এবং কান্ড বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। যার ফলে ফলন ভালো হয়।
  • এ সারে থাকা নাইট্রোজেন উদ্ভিদের ক্লোরোফিল উৎপাদনের মাধ্যমে গাছপালার রং গাড়ো সবুজ রাখে। যার ফলে জমিতে সবুজ রঙের টাটকা ফসল পাওয়া যায়।
  • ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হলে জমির ফসলের ফলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • তাছাড়াও গাছপালার প্রয়োজনীয় শর্করা ও প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পরিশোষণের হার বাড়িয়ে দেয়।
  • ইউরিয়া সার আমিনো অ্যাসিড উপাদানে সাহায্য করে থাকে, যা ফসলের সাথে মিশে প্রাকৃতিক রূপে তৈরি হয়। এটি ফসলের শোষণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
  • ইউরিয়া সার ফসলের উচ্চ পরিশোষণ বৃদ্ধিতে এবং আমোনিয়াম নাইট্রোজেন সরবরাহ করতে সহায়তা করে, যা ফসলের সাথে সাথে পৌষ্টিক প্রভাব গড়ে তোলে।
তাহলে আশা করছি আপনারা এতক্ষণে ইউরিয়া সারের কাজগুলো জেনেছেন। আর এটি কেন ব্যবহার করবেন এ সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।

ইউরিয়া সারের সংকেত

আপনারা অনেকেই ইউরিয়া সারের সংকেত সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন ইউরিয়া সারের নাইট্রোজেন রয়েছে। এটি জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ও নাইট্রোজেনের ঘাটতি পূরণের সাহায্য করে। ইউরিয়া সারের সংকেত হল (NH2)2CO। এটি মূলত একটি জৈব রাসায়নিক যৌগ। যাকে ইউরিয়া সার বলা হয়ে থাকে।

ইউরিয়া সার স্প্রে করার নিয়ম

আপনার কি জানেন ইউরিয়া সার স্প্রে করার নিয়ম। যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই অংশের মাধ্যমে কিছু নিয়ম রয়েছে যা ইউরিয়া সার ফসলের জমিতে স্প্রে করার আগে মেনে চলতে হয়। চলুন সেগুলো জেনে নেই।

সঠিক সময়ে স্প্রে করুনঃ ইউরিয়া সার অবশ্যই ফসলের জমিতে সঠিক সময় স্প্রে করতে হবে। সাধারণত ফসলের বৃদ্ধির সময় ও বিকাশে পুষ্টি উপাদান পূরণে এ সময়ে ইউরিয়া সার স্প্রে করতে হয়।

সঠিক পরিমাণ সার ব্যবহার করুনঃ কোন ফসলে কতটুকু পরিমান ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। সেটি জেনে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। ফসল নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হবে। এর জন্য আপনি পেশাদার অভিজ্ঞ কৃষক ভাইদের কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন। এছাড়াও আপনি কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে জানতে পারবেন কি পরিমান ইউরিয়া সার ব্যবহার করা উচিত।

স্প্রে পদ্ধতি সঠিক করুনঃ ইউরিয়া সার স্প্রে করার জন্য বিভিন্ন স্প্রে পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন ধারা স্প্রে, সেমি-স্পোট স্প্রে, এবং ড্রিপ স্প্রে। সঠিক পদ্ধতি বেছে স্প্রে করতে হবে এবং তা মৌসুম, ফসল এবং মাটির পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে নির্বাচন করা প্রয়োজন। যদি স্প্রে পদ্ধতি নির্বাচন করতে না পারেন তাহলে কৃষি অধিদপ্তরে থেকে জেনে নেবেন।

উচ্চ পরিশোষণযোগ্য এবং আমোনিয়াম নাইট্রোজেন সারকে মিশানোঃ ইউরিয়া সার সঙ্গে উচ্চ পরিশোষণযোগ্য উপাদান এবং আমোনিয়াম নাইট্রোজেন সারগুলি মিশিয়ে স্প্রে করলে ফসলে সঠিক পুষ্টি উপাদান তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।

সংবেদনশীল অবস্থায় স্প্রে না করুনঃ যদি আবহাওয়া অসংবেদনশীল হয় অথবা বৃষ্টি আসতে চলেছে, তবে স্প্রে করার প্রয়োজন নেই। স্প্রে করার পূর্বে আবহাওয়া পূর্বাভাস দেখে নিবেন এবং যদি দরকার হয়, আবহাওয়া অধিদপ্তর অথবা কৃষি অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে পারেন। তারাই আপনাকে কখন স্প্রে করতে হবে বলে দিবে।

তাহলে আশা করছি আপনারা এতক্ষণ ইউরিয়া সার কিভাবে স্প্রে করবেন তা নিয়ম জানতে পেরেছেন। এটি ফসলের জমিতে স্প্রে করার আগে অবশ্যই কৃষি অধিদপ্তরের পেশাদার লোকদের সাথে কথা বলে নিবেন এবং তাদের থেকে পরামর্শ নিবেন।

ইউরিয়া সার তৈরির উপাদান ।ইউরিয়া সার কিভাবে তৈরি হয়

আপনারা অনেকেই ইউরিয়া সার তৈরি উপাদান সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন যা আমরা এই বিষয়ে এখন আলোচনা করব।ইউরিয়া সার তৈরির জন্য মূলত একটি উপাদান ব্যবহার হয়, যা হলো "ইউরিয়া" অথবা "ইউরিয়া নাইট্রেট"। ইউরিয়া হলো একটি নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগিক রাসায়নিক পদার্থ, যা মৌলিকভাবে নাইট্রোজেন প্রদান করে থাকে।

ইউরিয়া সার এটি প্রকৃতি থেকে অথবা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা যেতে পারে যা আমরা আলোচনা করব।সাধারণত ইউরিয়া তৈরির জন্য প্রধান উপাদান হলো মিথেন গ্যাস। মিথেন গ্যাস ব্যবহার করে ইউরিয়া সার তৈরি করা যায়। তবে ইউরিয়া সার তৈরি করা অনেক জটিল প্রক্রিয়া। অনেক ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং যত্ন সহকারে তৈরি করতে হয়। নিম্নে ইউরিয়া সার তৈরির নিয়ম বলা হলো।

অ্যামোনিয়া উৎপাদনঃ অ্যামোনিয়া (NH₃) ইউরিয়া সার উৎপাদনের জন্য একটি প্রধান কাঁচামাল। অ্যামোনিয়া সাধারণত হ্যাবার-বশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত করা হয়, যার মধ্যে একটি অনুঘটকের উপস্থিতিতে উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রায় নাইট্রোজেন (N₂) এবং হাইড্রোজেন (H₂) এর প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।

কার্বনডাইঅক্সাইড উৎপাদনঃ কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) প্রাকৃতিক গ্যাসের দহন সহ বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা উৎপাদন করা যায়। ইউরিয়া সংশ্লেষণে CO₂ একটি অপরিহার্য উপাদান।

ইউরিয়া সংশ্লেষণ (Buerger-Bosch প্রক্রিয়া): প্রকৃত ইউরিয়া সংশ্লেষণে Buerger-Bosch প্রক্রিয়ায় ঘটে। এই ধাপে, অ্যামোনিয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইড একটি দ্বি-পদক্ষেপ প্রক্রিয়ায় বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম কার্বামেট এবং তারপর ইউরিয়া তৈরি হয়ঃ
  • অ্যামোনিয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বিক্রিয়া: NH₃ + CO₂ → NH₂COONH₄ (অ্যামোনিয়াম কার্বামেট)
  • অ্যামোনিয়াম কার্বামেট পচন: NH₂COONH₄ → NH₂CONH₂ + H₂O (ইউরিয়া)
ইউরিয়া দ্রবণ গঠনঃ  ইউরিয়া প্রাথমিকভাবে দ্রবণ আকারে থাকে। এরপর এটি ঘনীভূত করা হয় এবং তারপর স্ফটিককরণে পাঠানো হয়।

ইউরিয়া স্ফটিককরণঃ ঘনীভূত ইউরিয়া দ্রবণ ঠান্ডা হলে, ইউরিয়া স্ফটিক গঠিত হয়। এই স্ফটিকগুলি অবশিষ্ট দ্রবণ থেকে পৃথক করা হয়।

ইউরিয়া গ্রানুলেশনঃ ইউরিয়া ক্রিস্টালগুলিকে তারপর শুকানো হয় এবং একটি দানাদার প্রক্রিয়ায় পাঠানো হয়, যেখানে কণাগুলিকে সার হিসাবে সর্বোত্তম প্রয়োগের জন্য গঠন এবং আকার দেওয়া হয়।তাহলে বুঝতে পারলেন এভাবে ইউরিয়া সার তৈরি হয় এবং এগুলোই হল ইউরিয়া সার তৈরির উপাদান।

ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কত

প্রিয় বন্ধুরা আপনারা যারা শিক্ষার্থী রয়েছেন তারা অনেকেই আছেন ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কত তা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা সকলেই জানি ইউরিয়া সার মূলত নাইট্রোজেন সরবরাহ করে অর্থাৎ জমিতে নাইট্রোজেন প্রদান করে। তাহলে জানা যাক ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ হল ৪৬%। অর্থাৎ ইউরিয়া সারের ৪৬ পার্সেন্ট নাইট্রোজেন রয়েছে।

ইউরিয়া সারের ব্যবহার

ইউরিয়া সার হলো একটি প্রধান নাইট্রোজেন সার যা কৃষি জমিতে ফসলগুলির উন্নতির জন্য ব্যবহার হয়। ইউরিয়া সারের নিম্নে ব্যবহার তুলে ধরা হলোঃ

নাইট্রোজেন সরবরাহঃ ইউরিয়া সার প্রধানত নাইট্রোজেন সরবরাহ করে, যা পৌষ্টিক এবং গাছের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ফসলের ত্বক, পাতা, পুষ্টি সংক্রান্ত বিভিন্ন অংশে ব্যবহার হয় এবং এটি গাছের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে যার ফলে শোষণ প্রক্রিয়া ভালোভাবে সংগঠিত হয়।

ফসলের বৃদ্ধি এবং ফলন বাড়ানোঃ ইউরিয়া সার ফসলের বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নাইট্রোজেন ফসলের ফলন বৃদ্ধিতে এবং গাছের সাথে মিশে পুষ্টিকর প্রভাব তৈরি করে।

ত্বক ও পাতা বৃদ্ধির জন্যঃ ইউরিয়া সার ত্বক ও পাতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত দরকারী। এ সার ব্যবহারে ফসল প্রোটিন, ক্লোরোফিল, এবং অন্যান্য মৌলিক পদার্থ পরিশোষণ করতে পারে।

ফলন এবং গুণ উন্নত করতেঃ ইউরিয়া সার পৌষ্টিক সার হিসেবে এবং ফলন এবং ফসলের সঠিক বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ফসলের গুণগতমান বাড়াতে সাহায্য করে এবং মোট ফলন এবং গুণগত মান উন্নত করে।

সঠিক সময়ে ব্যবহার করুনঃ ইউরিয়া সারটি সম্পৃক্ত ফসলের জন্য কমপক্ষে তিন সপ্তাহ পূর্বে বা বৃষ্টি হওয়ার কিছুদিন পরে ব্যবহার করতে পারেন, যাতে নাইট্রোজেন সঠিকভাবে ফসলের জমিতে ছড়িয়ে যেতে পারে।

ইউরিয়া সার ব্যবহারের আগে বিশেষভাবে স্থানীয় কৃষিবিদকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত ।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউরিয়া সার কারখানা কোনটি

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আপনারা অনেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউরিয়া সার কারখানা কোনটি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। চলুন আমরা তা জেনে নিই। বাংলাদেশের এই পর্যন্ত ১০টি সার কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউরিয়া সার কারখানা হল যমুনা সারকারখানা। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউরিয়া সার কারখানা। এই কারখানাটি জামালপুরের তারাকান্দিতে অবস্থিত। এখানে দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হয়। আর এই কারখানাটি জাপান সরকারের সহায়তায় তৈরি করা হয়।

ইউরিয়া সার প্রয়োগ পদ্ধতি

আপনারা কি জানেন ইউরিয়া সার প্রয়োগ পদ্ধতি রয়েছে। যেটি মেনে জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে অবশ্যই ভালো ফলন পাবেন। চলুন আমরা এখন এই পদ্ধতি গুলো বিস্তারিত জেনে নেই।

ভূমি পরীক্ষাঃ ইউরিয়া সার ব্যবহারের আগে ভূমি পরীক্ষা করে নিতে হবে। ভূমি পরীক্ষার মাধ্যমে নাইট্রোজেন, ফসফেট, পোটাশিয়াম, পিএইচ (অ্যাসিডিটি), ম্যাক্রো এবং মাইক্রোনাট্রিএন্টস সহ ভূমির পরিশোষণ এর অবস্থা জানা যায়। তাই ভূমি বা জমি পরীক্ষা করতে হবে।

সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করুনঃ ইউরিয়া সার ব্যবহার করার জন্য সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ফসলের জমিতে ফসল ফোলানোর ওপর নির্ভর করে মাত্রা নির্ধারণ করতে হয়।

ইউরিয়া সার ছিটানোঃ ইউরিয়া সার ছিটাতে হয়, যাতে সারটি ভূমির উপর সঠিকভাবে ছড়িয়ে যায়। এছাড়াও সঠিকভাবে ছড়ানোর জন্য আপনি স্প্রে পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন, যেমন ড্রপ স্প্রে, স্পিন্কার, ব্রডকাস্ট স্প্রে, এবং স্যান্ড স্প্রে।

সঠিক সময়ে ছিটানোঃ ইউরিয়া সার সঠিক সময়ে ছিটাতে হয়। এটি প্রাথমিকভাবে ক্রয় করা সহ, ফসলের বৃদ্ধির সময় বা পুষ্টির প্রয়োজনের সময়ে ছিটাতে হয়।

বৃষ্টি পূর্বাভাস করুনঃ ইউরিয়া সার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বভাস অর্থাৎ সেই দিনে বৃষ্টি হবে কিনা সেটি দেখে নিবেন। কারণ সার ছেটানোর পর বৃষ্টি হলে তার জমির জন্য কোন কাজে দেবে না। তাই অবশ্যই দরকার হলে বৃষ্টির পর সার প্রয়োগ করবেন।

ইউরিয়া সারের কাঁচামাল হিসেবে কি ব্যবহার করা হয়

আপনারা কি জানেন ইউরিয়া সারের কাঁচামাল কি। ইউরিয়া সারের কাঁচামাল হিসেবে সাধারণত মূল উপাদান হিসেবে মিথেন গ্যাস ব্যবহার করা হয়। আর এই মিথেন গ্যাস প্রাকৃতিক গ্যাসে রয়েছে। যার পরিমাণ 96 শতাংশ। তাহলে বুঝতে পারছেন ইউরিয়া সারের কাঁচামাল হিসাবে প্রাকৃতিক গ্যাস অর্থাৎ মিথেন গ্যাস ব্যবহার হয়।

ইউরিয়া সারের প্রধান কাঁচামাল কি?

উত্তরঃ ইউরিয়া সারের প্রধান কাঁচামাল হল মিথেন গ্যাস যা মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ ৯৬%। যা সবচেয়ে অধিক পরিমাণে থাকে।

ইউরিয়া সারের প্রধান উপাদান কি?

উত্তরঃ ইউরিয়া সারের প্রধান উপাদান হচ্ছে নাইট্রোজেন। আমরা জানি ইউরিয়া সারে ৪৬ পার্সেন্ট নাইট্রোজেন উপাদান উপস্থিত থাকে।

টবে ইউরিয়া সার দেওয়ার নিয়ম

প্রিয় কৃষক ভাইয়েরা আপনারা অনেকেই টবে ইউরিয়া সার দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। যা আমরা এখন এই অংশে আলোচনা করব। তবে ইউরিয়া সার দিতে হলে অবশ্যই টবটি ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি সাইজের হতে হবে। তাহলে আপনি টবে অতি সহজেই ইউরিয়া দানা চার থেকে পাঁচটি অথবা ১২-১৪ টি দানা ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটু বেশি হয়ে গেলে তেমন গাছের ক্ষতি হবে না। কিন্তু যদি অধিক পরিমাণে ব্যবহার করেন তাহলে গাছের জন্য ক্ষতি হতে পারে।

এছাড়াও আপনি টবের গাছে স্প্রে করে ব্যবহার করতে পারেন। এক লিটার বোতলের মধ্যে এক লিটার পানি নিয়ে এর মধ্যে তিন গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে নিবেন। মেশানো হয়ে গেলে গাছের পাতায় স্প্রে করতে পারেন। কখনোই ফুলে অথবা ফলে স্প্রে করবেন না , এখানে স্প্রে করলে ফুল ও ফলের ক্ষতি হয়।

ইউরিয়া সারের দাম ।ইউরিয়া সারের মূল্য তালিকা

ইউরিয়া সার সম্পর্কে তো সকল কিছু জানতে পেরেছেন। তবে ইউরিয়া সার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ইউরিয়া সারের দাম ও ইউরিয়া সারের মূল্য তালিকা সম্পর্কে জানা উচিত। সেই অনুযায়ী আপনি কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের নাম ২৭ টাকা করা হয়েছে। আগে ছিল ২২ টাকা পরে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২৭ টাকা করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এই সারের মূল্য প্রতি কেজি ৪৮ টাকা। তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন কৃষকদের ইউরিয়া সার কিনতে ২৭ টাকা খরচ পড়বে।

শেষ কথা

আশা করছি আপনারা ইউরিয়া সারের কাজ কি এবং ইউরিয়া সার কেন ব্যবহার করবেন ও ইউরিয়া সারের সংকেত কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছেন। এই সারগুলো ব্যবহার করার আগে অবশ্যই পেশাদার কৃষি ভাইদের কাছ থেকে পরামর্শ নিবেন। তবে বিশেষ করে কৃষি অধিদপ্তরে যোগাযোগ করলে সবচেয়ে ভালো হয়। সেখানে আপনাকে সকল বিষয়ে সাহায্য করবে। তাই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে শেয়ার করবেন এবং এ ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের ইনফো নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url