এইডস কত দিন পর ধরা পরে - এইডস এর লক্ষণ ও কারণ জানুন

আপনার অনেকে আছেন যারা এইডস কত দিন পর ধরা পরে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তবে কোথাও সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই কারণ আজকের পোস্টটিতে আমরা আপনাদের সুবিধার জন্য এইডস কত দিন পর ধরা পরে ও এইডস এর লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এইডস কত দিন পর ধরা পরে - এইডস এর লক্ষণ ও কারণ
পোস্টসূচিপত্রঃআপনি যদি এইডস কত দিন পর ধরা পরে সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানতে চান তাহলে আমাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকুন। এবং মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন তাহলে এইডস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ভূমিকা

এইডস হলে করনীয় কি এ বিষয়টি আমাদের সবার জেনে রাখা উচিত। কারণ এইডস হল এক প্রকার মরণব্যাধি বলা চলে। এই রোগের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আমাদের সকলের উচিত এইডস রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা। অনেকেই এইডস সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু জানেন। তবে ভালো করে ধারণা রাখা উচিত। সেই ধারণা দেওয়ার জন্যই আজকের পোস্টটিতে আমরা আলোচনা করেছি।
আরো পড়ুনঃ 
তবে আপনারা এখানে এইডস হলে করণীয় কি, এইডস এর লক্ষণ ও কারণ,এইডস কত দিন পর ধরা পরে ও এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় কত মাসে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

এইডস কি

এইডস এর পূর্ণরূপ হল Acquired Immunodeficiency Syndrome (AIDS)। এইডস Human Immunodeficiency Virus (HIV) দ্বারা সৃষ্ট জটিল রোগ। এই ভাইরাস দেহের ইমিউন সিস্টেমকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দেয় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়। এটি একটি মারাত্মক মরণ ব্যাধি রোগ। এই রোগের কিছু লক্ষণ ও কারণ রয়েছে। যা আমরা জানতে পারবো।
রোগটি প্রথম 1981 সালে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) চিহ্নিত করেছিল।এইডস এখন বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলেছে। 2007 সালের গণনা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রায় 33.2 মিলিয়ন মানুষ এইডসে মারা গেছে, যার মধ্যে 330,000 শিশু রয়েছে। তাহলে বুঝতে পারছেন এইডস রোগ কতটা ভয়ংকর। তাই আপনাদের এইডস রোগ সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।

এইডস এর লক্ষণ ও কারণ

এইডস রোগের লক্ষণ ও কারণ রয়েছে যা জানলে আপনারা সতর্ক হতে পারবেন। তাই আপনারা এইডস এর লক্ষণ ও কারণ জেনে নিন।এইডস (অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম) এর লক্ষণগুলি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। এইডস এর লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হল।
  • এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা গুরুতর হতে পারে। এছাড়া ঘন ঘন জ্বর ও মাথা ব্যাথা হতে পারে। তবে এটি রোগী ভেদে পরিবর্তিত।
  • এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা এবং ছত্রাক সংক্রমণ ঘটতে পারে। অর্থাৎ অন্যান্য রোগ গুলো আক্রমণ করতে পারে।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা শুষ্ক কাশির মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়।
  • হালকা বমি বমি ভাব এবং ঘন ঘন বমি হওয়া। পেটের বিভিন্ন সমস্যা হওয়া।
  • এইচআইভি সংক্রমণের কারণে শরীরে ব্যথা এবং ত্বকে পুঁজ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই পুঁজগুলো চুলকানির মতো সমস্যা তৈরি করে।
  • এ রোগে আক্রান্ত হলে অস্বাভাবিকভাবে ওজন হ্রাস ঘটতে থাকে।
  • এছাড়া চরম ক্লান্তি এবং ক্রমাগত ক্লান্তি অনুভব হতে পারে।
  • অনেক সময় এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া দেখা যায়।
  • সংক্রমণের কারণে ঘনঘন জ্বর এবং রাতের ঘাম হতে পারে।
  • এছাড়া মুখের ঘা এবং গলা ব্যথা হওয়ার কারণে খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া।
  • আক্রান্ত রোগীদের ত্বকে ফুসকুড়ি, ক্ষত বা ঘা হতে পারে। স্মৃতিশক্তি অনেক সময় হ্রাস পায়।
  • রোগীদের ক্রমাগত কাশি এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  • এক মাসের অধিক সময় ধরে টানা জ্বর জ্বর অনুভব করা।
  • মুখমন্ডল সহ দেহের অনেক অংশ ফুলে যাওয়া। এছাড়া সারা দেহে চুলকানি হয়ে থাকে।
মনে রাখবেন যে এই লক্ষণগুলি উন্নত এইচআইভি সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও ঘটতে পারে। চলুন এবার জেনে নিই এইডস হওয়ার কারণ কোনগুলো। এইচআইভি ভাইরাসের কারণে এ রোগ থাকে তা আমরা সবাই জেনে এসেছি।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য, যোনিপথের তরল, মলদ্বারের তরল এবং বুকের দুধ সহ নির্দিষ্ট শরীরের তরলগুলির সংস্পর্শের মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস অর্থাৎ এইডস ছড়াতে পারে।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন করা হলে তার মধ্যে থাকা এইচআইভি ভাইরাস অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা সূঁচ বা সিরিঞ্জ অন্য ব্যক্তির দেহে ব্যবহার করলে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
  • এছাড়া এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করলে ওই সুস্থ মানুষটি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাবে।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, সুচ বা সিরিঞ্জ, ব্যবহার সকল জিনিসপত্র অন্য ব্যক্তি ব্যবহার করলে সংক্রমণ ঘটতে পারে। এমনকি সেলুনে ব্যবহৃত একই ব্লেড একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করলে তার মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পারে।
  • এইডস রোগে আক্রান্ত কোন মায়ের বাচ্চাদের এই রোগ হতে পারে। এছাড়া এইডস রোগ আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ পান করলে বাচ্চাদের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

এইডস হলে করনীয় কি

এতক্ষণ তো আপনারা জানতে পারলেন এইডস এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে। এর পাশাপাশি আমাদের এইডস হলে করণীয় কি এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। কারণ এটি একটি মরণব্যাধি যার কোন চিকিৎসা নেই। এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ফলে রোগী একটু শান্তি পায়। চলুন জেনে নেই এইডস হলে করণীয় কি।
  • সর্বপ্রথম আপনাকে পেশাদার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করুন।
  • এইডস রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ART করতে পারেন।ART হল ওষুধের সংমিশ্রণ যা এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ দমন এবং দেহের ইউনিয়ন সিস্টেমকে ঠিক করতে সাহায্য করে।
  • চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধগুলি নিয়মিত গ্রহণ করুন ফলে এইচআইভি ভাইরাস হালকা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
  • এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য নিরাপদ যৌন মিলন করুন। অবৈধ সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকুন।
  • নিয়মিত সুষম খাদ্য খান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, পর্যাপ্ত ঘুমান এবং অবৈধ ওষুধ এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহলের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ এড়িয়ে চলুন।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির সকল জিনিসপত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • এইডস রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তবে ঔষুধ গ্রহণের মাধ্যমে ভাইরাসকে সামান্য পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়।তবে এর থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না।
তাহলে আপনারা সকলে জানতে পারলেন এইডস হলে করণীয় কি। এখন আমরা জানব এইডস কত দিন পর ধরা পরে।

এইডস কিভাবে হয় - এইডস কিভাবে ছড়ায়

সাধারণত মানবদেহে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত হলে এইডস রোগটি হয়ে থাকে। এটি একটি মরণব্যাধি।এ রোগ হলে সময়ের সাথে সাথে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসতে থাকে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। রোগীর অবস্থা যতদিন যেতে থাকে তত খারাপ হতে থাকে। আপনার হয়তো অনেকেই জানেন না এইডস কিভাবে ছড়ায় ও এইডস কিভাবে হয়। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমার এবার জেনে নেই।
  • এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনে এইচআইভি সংক্রমণ হয়ে থাকে। বিশেষ করে এইচআইভি ভাইরাস দীর্ঘক্ষণ চুম্বন ও বীর্যের মাধ্যমে ছড়ায়।
  • মায়েদের ক্ষেত্রে যেসব মা এইডস রোগে আক্রান্ত সেসব মায়েদের বুকের দুধ শিশুদের খাওয়ালে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ হয়।
  • বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র অথবা এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ঢোকানো সুচ ব্যবহার করলে আক্রান্ত হয়।
  • যদি কোন এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর রক্ত পরীক্ষা না করেই অন্য ব্যক্তির দেহে তা দেওয়া হয় তাহলে সেই ব্যক্তিটি এইডস রোগে সংক্রমণ হতে পারে।

এইডস কত দিন পর ধরা পরে

আপনারা সকলে জানতে চেয়েছেন এইডস কত দিন পর ধরা পরে। এইডস রোগ সাধারণত এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণের ২-৩ মাসের মধ্যে প্রাথমিক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে আস্তে আস্তে গুরুত্ব হলে তখন সকল লক্ষণ গুলো দেখা যায়। তবে ব্যক্তিভেদে লক্ষণগুলো পরিবর্তন হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ 
গলা ব্যথা করা, ফুসকুড়ি ওঠা, মাথা ব্যথা হওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা ইত্যাদি প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে হয়ে থাকে।এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণের পরে ধীরে ধীরে উক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। পরে অধিক পরিমাণে সংক্রমণ হলে মারাত্মক লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকে।

এইডস এর প্রতিরোধ

এইডস হলে করনীয় কি আমরা জানলাম। তবে এইডস এর প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা উচিত। চলুন জেনে নেই এইডস এর প্রতিরোধ সম্পর্কে।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন করা হলে তার মধ্যে থাকা এইচআইভি ভাইরাস অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই অনিরাপদ যৌন মিলন বা অবৈধ সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা সূঁচ বা সিরিঞ্জ অন্য ব্যক্তির দেহে ব্যবহার করা যাবে না।
  • এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য নিরাপদ যৌন মিলন করুন। অবৈধ সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকুন।
  • এছাড়া এইডস রোগ আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ পান করা থেকে বাচ্চাদের বিরত রাখুন।

এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় কত মাসে - এইডস কত দিন পর ধরা পরে 

এইডস রোগের লক্ষণ সাধারণত দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রকাশ পায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এইডস রোগের লক্ষণ তিন মাসের অধিক সময় পর দেখা দিয়ে থাকে। আমরা সকলে জানি এইডস একটি মারাত্মক মরণব্যাধি যা মূলত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। আর এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর অবশ্যই ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা নেওয়া উচিত। তা না হলে মৃত্যু অনিবার্য। আর এই রোগ থেকে অন্যকে সতর্ক রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে যা আমরা অলরেডি আলোচনা করেছি।

শেষ কথা

তাহলে আজকের আর্টিকেলটিতে আপনারা এইডস কত দিন পর ধরা পরে এবং এইডস এর লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে জানতে পারলেন। সাথে সতর্ক হতে পারলেন। নিজে সতর্ক থাকুন এবং অন্যকে সতর্ক করুন। এইডস একটি মরণব্যাধি এর থেকে বাঁচতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনাদের যদি আর্টিকেলটি ভালো থাকে তাহলে অবশ্যই এইডস সম্পর্কে অন্যদের জানাতে এবং সতর্ক করতে শেয়ার করুন। এ ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের ইনফো নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url