শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না - শ্বাসকষ্টের দোয়া

শ্বাসকষ্ট আমাদের সময়ে এসে অনেক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে যে কোন বয়সের মানুষেরই শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।আমরা অনেকেই শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা।এই সম্পূর্ণ পোস্ট জুড়ে শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না - শ্বাসকষ্টের দোয়া এই উক্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না - শ্বাসকষ্টের দোয়া
আমার সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তাহলে আশা করি শ্বাসকষ্ট বিষয়ক সকল তথ্য আপনি জানতে পারবেন।

ভূমিকা

শ্বাসকষ্ট বলতে বোঝায় একজন মানুষের শ্বাস নিতে সমস্যা হয় এবং বুক চেপে ধরে আসে। সাধারণত অধিক পরিশ্রম করার জন্য শ্বাসকষ্ট সমস্যা দেখা যেতে পারে। এ সম্পূর্ণ পোস্ট জুড়ে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে। তাই শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পেতে সম্পূর্ণ পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ুন 

শ্বাসকষ্ট লক্ষণ

শ্বাসকষ্টের প্রধান লক্ষণ হল ঘন ঘন শ্বাস ফেলা অথবা ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া। তার সাথে সাথে বুকের পাঁজর ওঠানামা এবং দম বন্ধ মনে হওয়া। এই উপসর্গ গুলো দেখা দিলে আমরা সাধারণত সেটাকে শ্বাসকষ্ট বলে থাকি। সাধারণত একটু পরিশ্রম করলেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এবং বুক ধরফর করে অথবা বুক চেপে ধরে।

এবার আসি শ্বাসকষ্টের প্রথমত যেই লক্ষণ গুলো দেখা যায়। যেমন, আপনি নিশ্বাস নেওয়ার সময় শো শো শব্দ অনুভব করতে শুরু করবেন। গলা ব্যথা করতে শুরু করবে, এমন কি আপনার দেহের ওজন কমে যেতে পারে, তার সাথে সাথে আপনার ক্ষুধা কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা অনুভব হওয়া, এছাড়াও ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করা এবং অতিরিক্ত পরিমাণে কাশি হওয়া শ্বাসকষ্টের লক্ষণ হতে পারে।

যদি এ লক্ষণ গুলো দেখতে পারেন তাহলে অবশ্যই নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিবেন। কারণ শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে পরে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাই অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

আরো পড়ুনঃ রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা

শ্বাসকষ্ট কেন হয়

সাধারণত হাঁপানি, ফুসফুসের সমস্যা, নিউমোনিয়া, যক্ষা, স্থূলতা, এলার্জি ইত্যাদি কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আবার আমাদের শরীরে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দিলেও শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি যদি রাতে ঠিকমতো না ঘুমান তাহলে আপনার শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়াও যদি আপনার কিডনির কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনার শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

একটু যদি আপনি অসাবধানতা অবলম্বন করেন তাহলে সর্দি এবং কাশি থেকেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আবার যদি কারো নিউমোনিয়া হয় সেই নিউমোনিয়া থেকেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যদি আপনার শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুসে কিছু আটকে যায় তাহলে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার যদি আপনার শ্বাসনালী শোরু বা ছোট হয়ে যায় তাহলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

সব থেকে বড় কারণ যেটি হলো ধূমপান। ধূমপানের কারণে সবচেয়ে বেশি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এছাড়াও আর এস ভাইরাসের কারণেও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে 

টেনশনে শ্বাসকষ্ট

সাধারণত টেনশন করলে আমাদের অনেক শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা হতে পারে। আর আপনি যদি মানসিক টেনশনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার শ্বাসকষ্ট দেখা দিবে। কারন বেশি টেনশন অথবা কান্নাকাটি করলে আমাদের গলার গ্লানিতে একটু একটু করে পানি জমতে থাকে। আর এই পানি জমার কারণে আমাদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

টেনশন খুব খারাপ জিনিস টেনশন করে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি আমাদের শরীরে অনেক রোগ দেখা দিতে পারে যেমন, হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রেন স্ট্রোক ইত্যাদি। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন কম টেনশন করার। আর টেনশন দূর করার জন্য ব্যায়াম অথবা এক্সারসাইজ করতে পারেন। ব্যায়াম টেনশন দূর করতে সাহায্য করবে।

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না

সাধারণত শ্বাসকষ্ট হলে আমাদের ঠান্ডা জাতীয় খাবার একদমই খাওয়া যাবেনা। ঠান্ডা জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। ঠান্ডা জাতীয় খাবার যেমন, ঠান্ডা দুধ, দই, পনির, আইসক্রিম ইত্যাদি। এই খাবারগুলো খেলে আমাদের শ্বাসকষ্টের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। তাই বলা যায় যে শ্বাসকষ্ট যদি হয় আপনার তাহলে এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন।

আর পারলে বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড থেকে বিরত থাকুন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে ফাস্ট খাবার জন্য শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আর এই শ্বাসকষ্ট বেশি হয় ফাস্টফুড খাওয়ার কারণে শিশুদের। তাই অবশ্যই শিশুদের ফাস্টফুড থেকে বিরত রাখুন। তাদেরকে ভিটামিন এবং পুষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াবেন।

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়

হঠাৎ করে যদি আপনার শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে করণীয়,, প্রথমত আপনি সোজা হয়ে বসে পড়ুন এবং মনে রাখবেন ভয় পাবার কিছুই নেই। মনে রাখবেন শ্বাসকষ্ট হলে কখনোই শুয়ে পড়বেন না। যদি শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে চলে যান। সালবিইউটামল এর মধ্যে প্রতিবার একবার করে চাপ দিয়ে পাঁচবার শ্বাস নিতে থাকুন।

ওষুধ টা ঠিকমতো টেনে নিতে পারছেন কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। আপনার শরীরের রক্তচাপ মেপে দেখুন। যদি আপনার শরীরের রক্তচাপ বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সমস্যা বেড়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান।

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় কি তা সবাই জেনে নেওয়া উচিত। কেননা শ্বাসকষ্ট হলে কি কি পদক্ষেপ তখন গ্রহণ করা উচিত তা না জানলে অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক।
  • মাদকদ্রব্য বা ধূমপান সেবনের অভ্যাস থাকলে অথবা গ্রহন করলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই শ্বাসকষ্ট হলে মাদকদ্রব্য পরিত্যাগ করুন বা পরিহার করুন।
  • আপনার শরীরে এলার্জি থাকে তাহলে অবশ্যই এলার্জি হতে পারে এমন খাবার পরিহার করতে হবে। যেমনঃ গরুর মাংস , বাদাম , ইলিশ মাছ , পালং শাক ও ধুলাবালি ইত্যাদি।
  • আপনার দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • অতিরিক্ত  পশমওয়ালা পশুপাখি ঘরে না রাখার চেষ্টা করবেন। কেননা এই পশম শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।
  • বাড়িঘর সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবন মুক্ত রাখুন।
  • আপনার যদি শ্বাসকষ্ট আগে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা করান।
  • বাড়িঘর যখন পরিষ্কার করবেন তখন অবশ্য মাস্ক ব্যবহার করবেন।
  • বাড়ির বাইরে গেলে ধুলাবালি হাত থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ব্যবহার করুন।
  • আপনার যদি হাঁপানি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা করান।
  • ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা খাবার পরিহার করার চেষ্টা করুন। কেননা এটি দেখে কফ বা ঠান্ডা সৃষ্টি করতে পারে। যা মূলত শ্বাসকষ্ট সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • সব সময় দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা চেষ্টা করুন। কারণ দুশ্চিন্তা শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দেয়।

শ্বাসকষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

যদি আপনার শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে সামনের দিকে ঝুঁকে বসতে হবে। সামনের দিকে ঝোঁকে বসলে আমাদের শরীর শান্ত হয় এবং নিঃশ্বাস নিতে সুবিধা হয়। এভাবে ঝুঁকে বসার ফলে ফুসফুস এবং হাটের চাপ সৃষ্টি হয়। এটি করার জন্য আপনার পাকে সমতল জায়গায় রেখে পেটের ওপর হাত রাখতে হবে এবং তারপর নাক দিয়ে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিতে হবে।

কিছুক্ষণ পর আবার নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। এই পদ্ধতিটা অবলম্বন করলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আরেকটি উপায় সেটি হলো পেটের পেশী ব্যবহার করা। পেটের পেশি ব্যবহার করে গভীর নিশ্বাস নিলে শ্বাসকষ্ট দূর হয়ে যেতে পারে। তৃতীয় হচ্ছে ইনহেলার। ইনহেলার ব্যবহার করলে এটি শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়াতে বাধার সৃষ্টি করে।

সাধারণত এটির গরম ভাব নিলে জমে থাকা গন তরলে পরিণত হয়। তার ফলে শ্বাসকষ্ট কমে যায়। চার নাম্বার হচ্ছে ব্ল্যাক কফি। ব্ল্যাক কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন যা শ্বাসকষ্ট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ব্ল্যাক কফি এর মধ্যে থাকা ক্যাফেইন আমাদের শ্বাসনালির পেশিকে শান্ত করতে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের শ্বাসকষ্ট দূর হয়ে যায়।

৫ নাম্বার হচ্ছে আদা। আদাতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ রয়েছে। যেটা আমাদের শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করে। হালকা গরম পানিতে অথবা চায়ের সাথে আদা খেলে এটি আমাদের নিঃশ্বাস এবং প্রশ্বাসকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

ছয় নাম্বার হচ্ছে হলুদ। সাধারণত হলুদে অনেক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল পদার্থ রয়েছে। আপনি যদি দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খান তাহলে শ্বাসকষ্ট দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রাতে শ্বাসকষ্ট

শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায় আপনি জানতে চান কিন্তু জানেন কি দিনের চেয়ে বেশি রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।সাধারণত আমাদের শ্বাসকষ্ট দ্বীনের চেয়ে বেশি রাতে বেড়ে যায়। আর রাতে শ্বাসকষ্ট বাড়ার কারণ হচ্ছে এলার্জি। এলার্জির কারণে রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত মেলা টোটিন এর জন্য রাতে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এই মেলা টোটিন নিঃসরণ এর মাধ্যমে মানুষের ঘুমানো ও জেগে ওঠার চক্র নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

শ্বাসকষ্টের দোয়া

আপনার অনেকেই শ্বাসকষ্টের দোয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির জন্য দোয়া রয়েছে। দোয়াটি হল "ওয়া ইজা মারিজতু ফাহুয়া ইয়াশফীন"অর্থাৎ (আমি যখন পীড়িত হই, তখন তিনিই আমাকে নিরাময় দান করেন) এ দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করবেন নিশ্চয়ই আল্লাহতালা আপনার শ্বাসকষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তি দান করবেন। হ্যাঁ নিয়মিত আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন এবং নামাজ আদায় করুন।

শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়াম

শ্বাসকষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় জানতে হলে অবশ্যই শ্বাসকষ্ট হলে করণীয় ব্যায়ামগুলো সম্পর্কে জানা উচিত। যার ফলে আপনারা শ্বাসকষ্ট হলে কি কি ব্যায়াম করা উচিত তা জানতে পারবেন।দেহে অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। তাই দেহে অক্সিজেন বাড়ানোর জন্য মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন। 

মুখ দিয়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ অক্সিজেন বা শ্বাস গ্রহণ করে আবার ত্যাগ করুন ।এভাবে পাঁচ বার থেকে ছয় বার করতে থাকুন দেখবেন শ্বাসকষ্ট তাৎক্ষণিক সমাধান হয়ে যাবে।হাই তোলা থেকে হাসি এই ব্যায়ামটি করলে শরীরে অক্সিজেনের চলাচলের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে আপনারা নিয়মিত এই ব্যায়ামটি করুন শ্বাসকষ্ট সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

শেষ কথা

আশা করি এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনার শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে ধারণা হয়েছে। যদি এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং নিত্যপ্রয়োজনে বিভিন্ন তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের ইনফো নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url