দোয়া কবুলের ইস্তেগফার ও দ্রুত দোয়া কবুলের আমল যেভাবে পড়বেন
আমরা সকলেই সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া করে থাকি। আর এই দোয়া দ্রুত কবুলের জন্য দ্রুত দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলে দ্রুত দোয়া কবুলের আমল দোয়া কবুলের ইস্তেগফার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তাহলে চলুন এখন বেশি দেরি না করে দ্রুত দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক। আশা করছি আপনি খুব উপকৃত হবেন।
ভূমিকা
ইসলাম ধর্মের অনুসারিগণ সবসময় নবি রাসলের দেখানো পথ অনুসরন করার চেষ্টা করেন। আর আমরা মানুষ হিসেবে সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া পার্থনা করে থাকি। আর এই দোয়া কবুলের জন্য কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। কিছু আদব ও মেনে চলতে হবে।
আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকেন তাহলে আপনি দোয়া কবুলের অস্ত্র, দোয়া কবুলের লক্ষণ, দোয়া কবুলের তাসবিহ, দোয়া কবুল হওয়ার সূরা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন এখন বেশি দেরি না করে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
দোয়া কবুলের অস্ত্র
দোয়া কবুলের জন্য কিছু নির্দেশিত নিয়ম মেনে করতে হবে। তবে আপনি চাইলে সকল সময়েই সৃষ্টি কর্তার নিকট দুই হাত তুলে দোয়া করতে পারবেন। দোয়া কবুলের সবথেকে উৎকৃষ্ট সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাতে তাহাজ্জত নামাজের পরে দুই হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া করা হলে তিনি অবশ্যই দোয়া কবুল করবেন।
দোয়া কবুলের অস্ত্র সম্পর্কে আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান সাহেব তার এক বক্ত্যব্যে বলেছেন আপনি সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া করার পূর্বে এই দোয়া আগে পড়ে নিবেন। সেগুলো হলোঃ
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আ'লা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর"
এই দোয়াটি পড়ার পরে কিছু তসবিহ পাঠ করতে হবে। সেগুলো হলোঃ
"সুবাহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা, আল্লাহুমাগফিরলি"
এই সকল তসবে পাঠের পরে দুই হাত তুলে দোয়া করলে সেই দোয়া অবশ্যই কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। তাই এটাকে দোয়া কবুলে অস্ত্র বলা হয়।
দোয়া কবুলের লক্ষণ
নবী রাসুলগণ ছাড়া সকল মানুষই হলো পাপপ্রবণ। মানুষজন নেক আমল করার চেয়ে পাপের দিকেই বেসি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। তাই তারা যখন তাদের পাপের কথা বুঝতে পারে তখন তারা তাদের পাপ কাজ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়লার নিকট দোয়া করে থাকে। আর তারা বুঝতে পারে না তাদের দোয়া কবুল হচ্ছে কিনা।
আরও পরুনঃ
দোয়া কবুলের কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেগুলে আপনি যদি বুজতে পারেন তাহলে বুঝবেন আপনার দোয়া তিনি গ্রহণ করেছেন আর আপনার সকল দোয়া কবুলের লক্ষণ হিসেবে আপনাকে কিছু লক্ষণ বুঝাচ্ছে। তাহলে চলুন এখন আমরা সকলেই দোয়া কবুলের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেই।
দোয়া কবুলের সবথেকে অন্যতম লক্ষণ হলো দোয়া পরবর্তি সময় আরো সুন্দর হওয়া। তেমনি ভাবে দোয়া কবুল না হওয়ার লক্ষণ হলো দিন দিন আপনার অবস্থা আগের থেকে আরো অনেক খারাপ হওয়া।
এই সকল তথ্য ছারাও দোয়া কবুলের জন্য কিছু কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হলো
- শরীরের পশম/লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া।
- চোখ দিয়ে পানি অঝরে গড়িয়ে পড়া।
- ভয় ভয় অনুভুত হওয়া।
- আল্লাহ তায়লার উপর ভীতি সঞ্চার হওয়া।
- আল্লাহ তায়লার সকল গুণাবলির উপরে আস্থা সৃষ্টি হওয়া।
- আনন্দ অনুভুত হওয়া।
- নিজেকে উৎফুল্ল ও অনেক হালকা মনে হওয়া।
দ্রুত দোয়া কবুলের আমল
পৃথিবীতে আমরা সকল মানুষই পাপিষ্ঠ। তাই আমরা সকলেই আল্লাহ তায়লার কাছে দোয়া করে থাকি। আর এই দোয়া দ্রুত কবুল হওয়ার জন্য কিছু আমল রয়েছে। যেগুলে মেনে দোয়া করলে দোয়া খুব দ্রুতই কবুল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তাহলে চলুন সেই সকল আমল সম্পর্কে জেনে নেই।
- আল্লাহ তায়লার প্রশংশা করা ও দরুদ শরীফের সাথে দোয়া করা।
- "আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন" বলে দোয়া শুরু করা।
- আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তি সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এই সময়টাতে দোয়া করার চেষ্টা করা।
- করআন পাঠের পূর্বে এবং কুরআন পাঠ শেষ করার পরে দুই হাত তুলে দোয়া করা।
- রোজা থাকা অবস্থায় দোয়া করা। কারণ রোজদার ব্যাক্তির দোয়া আল্লাহ তায়লা ফেরত দেন না।
- জিকির রত সময়ে দোয়া করা।
- মুসাফির ব্যাক্তির সকল দোয়া আল্লাহ তায়লা কবুল করে নেন।
- এই সকল দোয়ার নিয়ম সময়ের পরেও কিছু অবস্থা রয়েছে। যেই সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ তায়াল কবুল করে নেন। আমাদের সেই সকল উপায়ে দোয়া করতে হবে। তাহলে চলুন এখন সেই সম্পর্কে জেনে নেই।
- পবিত্রতা অর্জনের পরে দোয়া দোয়া করা। অপবিত্র অবস্থায় দোয়া না করা।
- আল্লাহ তায়লার কাছে বিনয়ের সহিত দুই হাত তুলে দোয়া করতে হবে।
- কাকুতি মিনতি করে দোয়া করা।
দোয়া কবুলের ইস্তেগফার
কোরআন শরীফে দোয়া কবুলের জন্য অনেক ইস্তেগফার রয়েছে। প্রায় ৫০ টির ও অধিক। তবে আপনাদেরকে নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য ইস্তেগফার সম্পর্কে জানাবো। যেগুলো সম্পর্কে অনেক বক্তাগণ বলেছেন। তাহলে চলুন এখন সেই সকল ইস্তেগফার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ইস্তেগফার -০১ঃ আরবীঃ ﺃَﺳﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ
বাংলা উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ।
এর অর্থঃ আমি আল্লাহর তায়লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
ইস্তেগফার -০২ঃ আরবীঃ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
বাংলা উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
এর অর্থঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তার দিকে ফিরে আসছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইস্তিগফার করতেন। [বুখারী ৬৩০৭]
ইস্তেগফার -০৩ঃ আরবীঃ ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ( ﺃﻧْﺖَ ) ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ ( ﺍﻟﻐَﻔُﻮْﺭُ
বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলী, ওয়া তুব ‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনায় “রাহীম”-এর বদলে: ‘গাফূর’।
এর অর্থঃ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।
ইস্তেগফার -০৪ঃ আরবীঃ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
বাংলা উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা- হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি।
এর অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তার কাছে তাওবাহ করি।
ইস্তেগফার -০৫ঃ আরবীঃ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা।
তথ্যসূত্রঃ ফেসবুক গ্রুপ দোয়া কবুলের গল্প গুলো
কোন কোন সময়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়?
যেই সকল সময়ে দোয়া কবুল হয় বলে জানা গিয়েছে। সেই সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলো। আশা করছি আপনি অনেক উপকৃত হবেন। তাহলে চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক সেই সম্পর্কে।
- শেষ রাতে দোয়া করলে কবুল হয়
- সিজদার সময় দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
- আজানের সময় দোয়া
- আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে
- হজের মৌসুমে দোয়া করলে কবুল হয়
- ফরজ নামাজের পর দোয়া
- জুমার দিন দোয়া কবুল হয়
- বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়
- রমজান ও শবে কদরের রাত
তথ্যসূত্রঃ Dhaka Post
দোয়া কবুলের তাসবিহ
আল্লাহ তায়ালা তার সকল গুণবাচক সুন্দর নাম উল্লেখ করে দোয়া করতে বলেছেন। তাতে তিনি খুশি হন। আর তার জন্য তিনি ক্ষমা অরে দেন। এছাড়াও অনেক আলেমায় কেরামগণ আল্লাহ তায়লার কাছে দোয়া করার পূর্বে কিছু তসবি পাঠ করতে বলেছেন। সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
দোয়া করার পূর্বে তসবি গুলো হলোঃ
- সুবাহানআল্লাহ
- আলহামদুলিল্লাহ
- ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
- আল্লাহু আকবার
- লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা
- আল্লাহুমাগফিরলি
আল্লাহ তায়লার নিকট দোয়া করার পূর্বে এই সকল তসবিহ পাঠ করলে আল্লাহ তায়লা অনেক খুশি হন। আর তার সাথে সাথে দোয়া ও খুব দ্রুত কবুল করে নেন। আশা করছি আপনি উক্ত বিষয়ে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।
শেষ কথা
আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের প্রধান আলোচনার বিষয় ছিলো দ্রুত দোয়া কবুলের আমল ও দোয়া কবুলের ইস্তেগফার সম্পর্কে। আশা করছি আপনি উক্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পারেছেন। এই রকম আরো আর্টিকেল প্রতিদিন ফ্রীতে পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।
আজকের ইনফো নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url