অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়

ঘুম মানুষের শরীরের খুবই প্রয়োজনীয় একটি জিনিস।ঘুমের ফলে মানুষের শরীরের পুনরায় কাজ করার শক্তি জাগে ।কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম হলে অবশ্যই সেটি আপনার জন্য ভালো হবে না ।অনেকে বলেন সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব হয় ,কাজ করতে ইচ্ছা করে না ,সব সময় বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে হয় ইত্যাদি । ঘুম আসলে কোন কাজে মন বসে না এবং কোনো কিছু করতে ভাল লাগেনা ।সুতরাং আজকে আমি আপনাদের অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বলব।

অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়

সূচিপত্রঃ অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়

অতিরিক্ত ঘুম কেন হয়

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের 9 ঘন্টা এর বেশি ঘুম হলে সেটিকে অতিরিক্ত ঘুম হিসেবে ধরা হয় । এটি অনেক কারণে হয়ে থাকে ।তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অতিরিক্ত ঘুম কে হাইপারসোমনিয়া বলা হয় ।

অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়

এছাড়াও আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণের অভাব হলে আপনার শরীরকে ক্লান্ত করে দেয় এবং ঘুম ঘুম ভাব থাকে ।আবার অনেকে রাত জাগেন যার ফলে  রাতে না ঘুমানোর কারণে দিনের বেলায় সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থাকে ,এছাড়াও

  • কারো কিডনির সমস্যা থাকলে ঘুম ঘুম ভাব হয়
  • কোন ওষুধের সাইডিফেক্ট হিসেবে 
  • কারো থাইরয়েড প্রবলেম থাকলে 
  • শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে 
  • অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলেও অতিরিক্ত ঘুম হয়

অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়

সকালের ঘুম দূর করার উপায় রয়েছে যেগুলো আপনারা মেনে চললে  থেকে মুক্তি পাবেন এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন যেগুলো নিয়ম ফলো করলে অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পাবেন সেগুলো হলোঃ

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম

অনেকেই রাত জাগেন বিভিন্ন কাজ করেন অথবা বিনা কারণে রাত জাগেন এবং সকালের দিকে ঘুমাতে পছন্দ করেন ।আপনারা কি জানেন রাতের ঘুম ভালো মতো না হলে সারাদিন আপনার ক্লান্তি ভাব কাটবে না ।এবং সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব হতে থাকবে ।

সুতরাং খিদা লাগে যেমন ভাত খেতে হয় ঠিক তেমন পর্যাপ্ত ঘুম আসলে যদি আপনি ঘুমান সেক্ষেত্রে সারাদিন যে ক্লান্তি বোধ থেকে যায় ।এবং ঘুম আসতে থাকে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থাৎ 8 থেকে 9 ঘণ্টা টানা ঘুমিয়ে নিন।

সাইক্রেডিয়ান রিদম মেইনটেইন করা

সাইক্রেডিয়ান রিদম হল এলার্ম ছাড়াই প্রাকৃতিক নিয়মে ঘুম চোখে নিয়ে আসে এবং প্রাকৃতিক নিয়মে ঘুম ভাঙিয়ে দেয় ।যা আপনার অতিরিক্ত ঘুম দূর করতে সাহায্য করবে ।অর্থাৎ আপনি যদি নিয়মিত এলার্ম দিয়ে ঘুমান এবং ঘুম থেকে উঠেন ,কয়েকদিন পর দেখবেন আপনার অভ্যাস হয়ে গেছে এবং এলার্ম ছাড়াই আপনি একা একা ঘুম থেকে উঠে যাচ্ছেন । কিন্তু কয়েকদিন যদি এই নিয়ম ভঙ্গ করেন তাহলে সাইক্রেডিয়ান রিদম মেন্টেন হবে না ।

অ্যালার্ম ক্লক ব্যবহার

ঘুমানোর আগে নির্দিষ্ট সময় অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমাবেন। তাহলে আপনার ওভার স্লিপিং আস্তে আস্তে দূর হবে এবং আপনার সারাদিনের ঘুম ভাব হবে না ।কয়েক সপ্তাহ এই নিয়মে ঘুম থেকে উঠলে দেখবেন আপনার অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি লাভ হয়েছে।

সূর্যের আলোতে দাঁড়াতে হবে

ঘুম থেকে উঠে সকালে আপনি সূর্যের আলোতে অবশ্যই দারাবেন ।কেননা সূর্যের আলো থেকে আসা রশি আমাদের শরীরের মেলাটোনিন নিঃসরণ বন্ধ করে দেয় ।আর আমরা জানি মেলাটোনিন আমাদের শরীরের ঘুম এনে দেয় ।মেলাটোনিন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে সেরাটনিক এর পরিমাণ বেড়ে যায় ,যা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ঘুম ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

শারীরিক ব্যায়াম করুন

সকালে উঠে সূর্যের আলোতে দাঁড়ানোর পর শারীরিক ব্যায়াম করুন 10 থেকে 15 মিনিট ।প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়াম করলে আপনার শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিবে । শরীর একটিভ হয়ে যাবে এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে এবং শরীর থেকে দুর্বলতা দূর হয় অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি দিবে।

গোসল করা

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করতে পারেন ।কেননা ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে শরীরের ফ্রেশ ভাব অনুভব হয় এবং আপনার ঘুম ভাব চলে যায় ।যার কারনে আপনার শরীর সতেজ হয়ে যায় এবং আপনি যেকোনো কাজ অনায়াসে করতে পারেন ।তাই সকাল বেলা অতিরিক্ত ঘুম আসলে আপনি গোসল করতে পারেন।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না পান করলে আমাদের শরীরে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায় ।যার ফলে অতিরিক্ত ঘুম আসে ।তাই চেষ্টা করবেন প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে ।কিন্তু রাত্রে ঘুমানোর আগে বেশি পরিমাণে পানি খাবেন না ,এতে বারবার আপনাকে টয়লেটে যেতে হতে পারে ।যার ফলে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে এবং সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব আসবে।

সকালের নাস্তা গ্রহণ করুন

সকালে অনেকে  নাস্তা খান না ,এমনকি অনেকে নাস্তা না খেয়েই দিন কাটে ।একদম দুপুরে ভাত খান এক্ষেত্রে যেটি হয় সেটি হলো আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিউট্রিশন পায়না ।যার কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে থাকে ।তাই সকলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিগুণসম্পন্ন নাস্তা খাবে।

দিনের বেলা ঘুম পরিহার করুন

অনেকে দিনের বেলা ঘুমাতে পছন্দ করেন ,কিন্তু দিনের বেলা বেশি ঘুমালে রাত্রেবেলা আর ঘুম আসতে চায় না ।কেননা আপনি দিনে পর্যন্ত ঘুমিয়ে নিয়েছেন ,যার কারণে রাতে যখন আপনার ঘুম প্রয়োজন হবে তখন আপনার ঘুম আসবে না ।যার ফলে আপনার ইনসোমেনিয়া রোগের সৃষ্টি হবে ।তাই চেষ্টা করবেন দিনের বেলা না ঘুমিয়ে একদম রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো।

কফি খাওয়া

আপনার হয়তো অনেকেই জানেন কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা আমাদের শরীরকে সতেজ রাখে এবং ঘুম ভাব দূর করতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি ঘুম ভাব হয় তাহলে আপনি কফি খেতে পারেন, তবে অতিরিক্ত মাত্রায় কফি খাবেন না ।এক্ষেত্রে আপনার রাত্রে ঘুম ব্যাহত হতে পারে।

দুপুরবেলা অতিরিক্ত খাবার বর্জন

আমরা অনেকেই দুপুরবেলা অনেক বেশি খেয়ে থাকি ,কিন্তু দুপুরবেলা বেশি খেলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায় ।যার ফলে ট্রিপটোফেন নিঃসরণ হয় যা আমাদের শরীরে ঘুম নিয়ে আসে ।তাই দুপুরবেলা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেতে হবে তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা।

তবে দুপুরে খাবারের তালিকায় অবশ্যই আয়রন ,ফ্যাট ,প্রোটিন ,ফাইবার ,কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি জাতীয় খাবার খাবেন ।যা শরীরের এনার্জি এনে দিতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে একটু ঘুম থেকে পরিত্রান দেবে।


একনাগাড়ে বসে বসে থাকা বর্জন করুন

অফিসে বা অন্যান্য কাজে অনেক সময় একনাগারে অনেক্ষন বসে থাকতে হয় ।কাজ করতে হয় তাই আলসেমি বা ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে ।তাই অনেকক্ষণ যাবৎ এক জায়গায় না বসে থাকে কিছুক্ষণ পর ব্রেক নিন ।হাঁটাহাঁটি করুন পানি খান এক্ষেত্রে দেখবেন আপনার শরীর এনার্জি পাবে এবং ঘুম ভাব দূর হবে।

অন্ধকার পরিবেশ বর্জন করুন

পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইট আছে ভালো আছে এমন জায়গায় থাকুন ।কেননা আশেপাশের পরিবেশ যদি ঘুমের মত হয় তাহলে আপনার ঘুম আসতে বাধ্য ।তাই এমন কোন জায়গায় বসে কাজ করবেন বা বসবেন যেখানে অনেক লাইট ভালো থাকবে ।আর আপনারা সম্ভবত জানেন ও তিক্ত লাইট আলো ঘুম আসতে দেয় না।

ঘুম ঘুম ভাব কিসের লক্ষণ

ঘুম ভাব হাইপারসোমনিয়া রোগের লক্ষণ ।এছাড়াও শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে গেলে ,শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি ,গুণ ভিটামিন ইত্যাদি অভাব হলে শরীর ঘুম ঘুম ভাব হয় ।শরীরে ক্লান্তি বোধ আসে তাই যাদের  ঘুম ভাব হয় অবশ্যই একজন ডাক্তারের নিকটস্থ হয়ে সঠিক পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করুন ।কেননা কি কারনে শরীরে ঘুম ঘুম ভাব হয় শেটি আগে জানা উচিত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url