অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম কি? এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
অ্যালোভেরা একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার গুনা গুন অতুলনীয়। আমরা অনেকেই অ্যালোভেরার নাম শুনেছি অ্যালোভেরা ব্যবহার করে থাকি দৈনন্দিন জীবনে ,ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পেট ভালো রাখতে, চুল ভালো রাখতে ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে এটিকে ব্যবহার করে থাকে। অ্যালোভেরা অনেকে শরবত বানিয়ে খেয়ে থাকে, কিন্তু অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম কি বা অ্যালোভেরা খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম আছে কিনা ,কি পরিমান খেলে শরীরে কোনো ক্ষতি করবে না এবং অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো।
সূচিপত্রঃ অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম কি? এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম কি?
অ্যালোভেরার গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি ।এলোভেরা খাওয়ার নিয়ম হল অ্যালোভেরা জেল থাকে সেটি কে শরবত বানিয়ে খাওয়া ।অর্থাৎ অ্যালোভেরা জেল আপনি পানির সাথে মিশিয়ে বা যে কোন শরবতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন ।এটি আপনি যে কোন সময় খেতে পারবেন ,তবে মনে রাখবেন কোনকিছুই অতিরিক্ত খাওয়া বেশি ভালো না ।তাই আপনার যদি ঠান্ডা জনিত এলার্জি এর প্রবলেম থাকে তাহলে আপনি এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা
অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে ,আরো রয়েছে ভিটামিন বি টুয়েলভ ,ভিটামিন এ, মিনারেলস এবং খনিজ পদার্থ ।এছাড়াও আরো অনেক কিছু অ্যালোভেরা খেলে যে যে উপকার হয় সেগুলো হলোঃ
মানুষের শরীরের খারাপ কোলেস্টরেল অপসারণ করে মানুষের হার্ট বা হূদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে অ্যালোভেরা ।এটি ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ।এছাড়াও দেহের রক্ত কণিকা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
অ্যালোভেরা খাওয়ার মাধ্যমে মাংসপেশি বা হার শক্ত হয় ।এছাড়াও এলোভেরা মাংসপেশির ও জয়েণ্টের ব্যথা প্রতিরোধ করতেসাহায্য করে ।এছাড়া ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেল লাগালে ব্যথা উপশম হয়।
অ্যালোভেরার জুস দাঁতের মাড়ির ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে ,কেননা অ্যালোভেরার জুস দাঁতের মাড়ি শক্ত করে এবং দাঁত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে ।এছাড়াও দাঁতের মধ্যে যদি ক্ষতিকর জিবানু থাকে সেগুলো থেকে শুরু করে এবং দাঁত ক্ষয় থেকে দাঁত কে রক্ষা করে।
মানুষের শরীরে অতিরিক্ত ক্ষতিকর মেদ জমে শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয় ।এই ওজন অ্যালোভেরা জুস খাওয়ার মাধ্যমে কমানো সম্ভব হয় ।কেননা অ্যালোভেরা জুসের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি পদার্থ মানুষের শরীরের মেদ কমিয়ে ওজন হ্রাস করতে সহায়তা ।করে তাই ওজন কমাতে ডায়েট এলোভেরা জুস অবশ্যই রাখা উচিত।
মুখের দুর্গন্ধ দূরীকরণে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।এ লেভেলে আছে ভিটামিন সি যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা জুসের জুড়ি নেই ।এটি অন্তর উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্তর প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে যা হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয় ।অ্যালোভেরা ডায়রিয়া বিরুদ্ধে অনেক ভালো কাজ করে।
অনেকের মুখে ঘা হয়ে থাকে এবং যার ফলে এটি অনেক অস্বস্তিকর ।এবং খাবার খাওয়া সম্ভব হয়না আর এই মুখের ঘা থেকে মুক্তি পেতে অ্যালোভেরার জুস আপনার জন্য বেশ উপকারী হবে।
অ্যালোভেরার জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক রেখে দেহের রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে ।যদি কারো ডায়াবেটিস হয়ে থাকে ,সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার শুরুর দিকে যদি আরবের জুস নিয়মিত পান করা যায় সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। অর্থাৎ এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন যা ক্যান্সারের ছড়ানো থেকে রক্ষা করে ।তাই আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জুসের কোন বিকল্প নেই।
অ্যালোভেরা এন্টিমাইক্রোবিয়াল এন্টিফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ একটি ভেষজ উদ্ভিদ ।অ্যালোভেরা জুস নিয়মিত পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং টক্সিন বের করে দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
অনেকের উচ্চরক্তচাপ থেকে থাকে এই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অ্যালোভেরার জুস অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।এবং দেহের কোলেস্টরেল এবং চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ হাই প্রেসার রোগীর কি খাওয়া উচিত - উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর খাবার খেয়ে থাকি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এবং অ্যালোভেরা জুস আমাদের শরীরে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ গুলিকে অপসারণ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
যেহেতু অ্যালোভেরা আমরা খাওয়ার সাথে সাথে শরীরের বাইরে ব্যবহার করতে পারি ।সুতরাং এটির উভয় দিক দিয়ে গুনাগুন রয়েছে ।অ্যালোভেরা জুস খেলে আপনার শরীরে যদি কোনো চর্মরোগ বা ক্ষত জনিত সমস্যা থেকে থাকে তা সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরার জুস খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আপনি আপনার ক্ষতস্থান অথবা চর্মরোগ হয়েছে এমন জায়গায় এটিকে প্রতিটি মালিশ করলে আপনার চর্মরোগ অনেকক্ষেত্রেই কমে যাবে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকা জেনে নিন
আমরা সারাদিন কাজ করার ফলে শরীরে ক্লান্তি অনুভব করি ,এই ক্লান্ত অনুভব দূর করার ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার জুস অতুলনীয় ।অ্যালোভেরা পান করার ফলে আপনার শরীরে শক্তি আসবে এবং আপনার শরীরের দুর্বলতা ভাব থাকবে না। এটি দেহকে সতেজ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে।
অ্যালোভেরা জেল বা জুস পান করলে পেটের জন্য খুবই উপকার দিবে তো বটেই ,এছাড়াও এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে খুবই কার্যকরী ।পেটের যাবতীয় সমস্যা থাকলে এলোভেরা জুস খেলে অনেক ক্ষেত্রেই পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়।
এলোভেরা খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটা জিনিসের যেমন ভালো দিক থাকে তেমনটি খারাপ দিকও রয়েছে ।এবং অতিরিক্ত কোনো কিছুই খাওয়া সঠিক নয় ।অ্যালোভেরা আমাদের শরীরের জন্য অনেক কার্যকরী ।একটি প্রাকৃতিক ওষুধ বলতে পারি তবুও এর কিছু উপকারিতা রয়েছে যেমনঃ
- এর মধ্যে থাকা অ্যালো ল্যাটিক্স পদার্থ শরীরের জন্য খুবই বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর।
- যাদের এলার্জি রয়েছে এটি খেলে তাদের এলার্জি পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
- যাদের সর্দি ভাব ঠান্ডা লাগা রয়েছে তাদের না খাওয়াই ভালো খেলে আপনার রোগটি আরবে যেতে পারে।
- গর্ভধারণ মায়ের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জুস খুবই ক্ষতিকর।
- অতিরিক্ত অ্যালোভেরা খেলে পেটে অস্বস্তি সহ পেট কামড়াতে পারে।
- অতিরিক্ত অ্যালোভেরা পান করলে শরীরের ডিহাইড্রেশনের সৃষ্টি হয় এবংসুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন