অতিরিক্ত হাত পা ঘামার চিকিৎসা
ঘাম গ্রন্থি আমাদের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় একটি জিনিস, যা আমাদের শরীরের সমস্ত দূষিত পদার্থ বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত ঘাম হলে সেটি কোনভাবেই স্বাভাবিক নয়। কারণ কিছু কিছু মানুষের ঘাম হাত এবং পায়ের তালুতে হয়ে থাকে সেটি অল্প পরিমাণে হলে স্বাভাবিক ,কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় হাত-পায়ে টপটপ করে পানি পড়লে এটি খুবই অসুবিধাজনক ।
আপনি কি জানেন অতিরিক্ত হাত পা ঘামা কিসের লক্ষণ? অতিরিক্ত হাত পা ঘামা নিয়ে অনেক চিন্তিত এবং কোনভাবেই হাত পা ঘামার রোগ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পাচ্ছে না ।তাই তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট এই পোস্টে আমি আপনাদের হাত পা ঘামার চিকিৎসা সম্পর্কে বলবো এবং ব্যক্তিগত মতামত জানাবো।
সূচিপত্রঃ
হাত ঘামা রোগের নাম
অতিরিক্ত হাত পা ঘামা রোগের নাম হাইপারহাইড্রোসিস । এই রোগ মানুষের জন্য খুবই অস্বস্তিকর একটি রোগ ,কেননা হাইপারহাইড্রোসিস হলে আপনার শরীরের যে কোন অংশ থেকে খুব বেশি পরিমাণে ঘাম বের হতে থাকে। হাত পা ঘামা রোগ অনেক কারণে হয়ে থাকে যেমন ধরেন কারো যদি ডায়াবেটিস , থাইরয়েড, অতিরিক্ত টেনশন ইত্যাদি থাকে ,এর কারণে হাইপারহাইড্রোসিস হয়। আবার কখনো কখনো বিনা কারণে ও কোন কারন ছাড়াই হাত পা ঘামতে থাকে।
অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে কারো কারো হাত বা পা এত পরিমাণে যে কোন কিছু ধরতে গেলে বা লিখতে গেলে সেই কাগজটি ভেসে যায় ,অথবা সে সঠিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে না এবং অতিরিক্ত ঘামের কারণে তার পায়ে ঘাম জমে বিভিন্ন ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন হয়ে থাকে।
হাত পা ঘামার চিকিৎসা
হাত পা ঘামার চিকিৎসা হিসেবে আপনি দুইভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন ;একটি হল এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ও আরেকটি হলো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা। তাহলে চলুন জানা যাক হাইপারহাইড্রোসিস এর চিকিৎসা এর ক্ষেত্রে কোনটি কেমন কাজ করে-
হাত পা ঘামার ঔষধ হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তার বিভিন্ন ধরনের মুখে খাওয়ার ওষুধ সেবন করতে বলেন।যেমন প্রপানথেলিন ব্রমাইড অথবা হাতে অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত লোশন ,ড্রাইকেয়ার স্প্রে ইত্যাদি তিনবেলা ব্যবহার করতে বলা হয় কারণ অনেকের শুধুমাত্র অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত লোশন ব্যবহার করে কাজ হয় না ।সে ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন।
ওষুধ খেয়ে অথবা ড্রাইকেয়ার স্প্রে ব্যবহার করেও অনেকের হাত পা ঘামা ঠিক হয় না ,সে ক্ষেত্রে আরো কিছু চিকিৎসা রয়েছে ।যেমন iontophoresis থেরাপি ।এই থেরাপি নির্দিষ্ট দিন যাবত নিলে হাত-পায়ের ঘাম কমে আসে এটি সম্পর্কে পোষ্টের নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে।
এছাড়াও আরেকটি পদ্ধতি আছে সেটি হল ইঞ্জেকশন প্রদানের মাধ্যমে ।ইঞ্জেকশন টির নাম হল বটুলিনাম টক্সিন। এটি নির্দিষ্ট দিন পর পর হাত পায়ের তালুতে প্রদান করা হয় এক্ষেত্রে রোগী পুরোপুরি মুক্তি লাভ করে কিছু সময় পর্যন্ত ।যেমন 6 মাস পরপর ,তিন মাস পর আবার ইঞ্জেকশন প্রদান করতে হয় ,এটি যদিও একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা।
হাত পা ঘামার হোমিও চিকিৎসা
এবার চলুন হাত পা ঘামার হোমিও চিকিৎসা নিয়ে কথা বলা যাক যদিও হোমিও চিকিৎসা বেশ দীর্ঘস্থায়ী এবং ধৈর্য ধরে কমপ্লিট করতে হয় ।সে ক্ষেত্রে তবুও অনেকটা কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। হোমিওপ্যাথিতে কিছু ওষুধ আছে যেগুলো আপনি খেলে আপনার হাত পা ঘামা কমে আসবে ,তবে দীর্ঘদিন যাবৎ আপনাকে একটি থাকতে হবে।
হোমিওপ্যাথি ওষুধ হিসেবে আপনি R32 Dr. Reckeweg এর হাইপারহাইড্রোসিস ড্রপটি সেবন করতে পারেন ।এটি খুবই কার্যকরী একটি জার্মানি অতিরিক্ত ঘাম কমানোর ঔষধ ।এটি আপনাকে প্রতিদিন 10 থেকে 15 ফোটা তিন বেলা খেতে থাকতে হবে টানা 1-2 মাস ব্যবহার করলে আপনি অবশ্যই ফলাফল দেখতে পাবেন ।তবে মনে রাখবেন হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেতেখেতে ছেড়ে দিলে সেটি আর কাজ করে না, তাই ধৈর্য ধরে খাওয়া চেষ্টা করবেন।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে চুল লম্বা করা যায় -ঘরোয়া পদ্ধতি জেনে নিন
হাত পা ঘামার মেশিন
উপরে উল্লেখিত চিকিৎসায় একটি থেরাপির কথা বলা হয়েছিল যেটা অতিরিক্ত হাত পা ঘামার চিকিৎসায় খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে । পূর্বে এই থেরাপি বাংলাদেশে পাওয়া যেত না আর বিদেশী মেশিনের দাম অনেক বেশি ছিল সুতরাং এটি অনেক ব্যয়বহুল ছিল ।
তবে বর্তমানে BI BEAT নামক রিসার্চ প্রতিষ্ঠান এ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন এবং এর কার্যকারিতা 98% বলে তারা দাবি করে।BI BEAT প্রতিষ্ঠান এর আন্টি শূয়েট iontophoresis মেশিনের দাম 9000 টাকা ।আপনারা চাইলে সেই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে থেরাপি নিতে পারেন অথবা বাসায় কিনে নিজে নিজেই বাড়িয়ে দিতে পারেন।
এক্ষেত্রে অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে ভিজা তোয়ালে এর উপরে হাত চালু রেখে দশ মিনিট করে টোটাল 20 মিনিট প্রতি হাতে থেরাপি নিতে হবে ।ঠিক একইভাবে পায়ের ক্ষেত্রেও নিতে হবে ,তবে অনেকাংশে হাতের ঘামা কমে গেলে পা ঘামা একা একাই ঠিক হয়ে যায়।
হাত পা ঘামা রোগের কারণে হয়তো অনেকে ভালোমতো হ্যান্ডশেক করতে পারে না অথবা কিছু লিখতে পারেনা । বিভিন্ন জায়গায় গেলে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তাকে মোকাবেলা করতে হয় ।সুতরাং আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি অভিজ্ঞ (ডার্মাটোলজিস্ট) চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিন ।এবং যদি আপনার খুবই সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে বলবো; আন্টি শূয়েট মেশিনটি আপনি বাসায় কিনে ব্যবহার করুন ।অবশ্যই ফলাফল পাবেন নিশ্চিত।
আরো পড়ুনঃ রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার
আশাকরি পোস্ট টি পড়ে আপনাদের ভাল লেগেছে ।কোন কিছু জিজ্ঞাসা করার থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন