তারাবি কত রাকাত? - তারাবি না পড়লে রোজা হবে কি?
শুরু হলো আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাস মাহে রমজান।আত্মসংযম ,আত্মসংশোধনের মাধ্যমে সব থেকে মুক্ত থেকে মহাশক্তির মধ্যে আত্মপ্রতিষ্ঠার এক সুবর্ণ সুযোগ এই মাহে রমজান। আমাদের কাছে অনেকেরই অজানা পবিত্র মাহে রমজানের আমল। সেই গুলো নিয়ে আজকের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয় আলোচনা করব ।
এছাড়াও আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে তারাবি কত রাকাত, তারাবি না পড়লে রোজা হয় কিনা, তারাবীতে নিয়ত কিভাবে করব, তারাবি কোন সূরা দিয়ে পড়বো ,মসজিদে না গিয়ে তারাবি পড়লে তারাবী নামাজ আদায় হবে কি না এই সব কিছুর উত্তর আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব-
সূচিপত্রঃ
- তারাবি না পড়লে রোজা হবে কি
- তারাবি কত রাকাত
- তারাবির নিয়ত কিভাবে করব
- তারাবি কোন সূরা দিয়ে পড়বো
- তারাবির নামাজে পড়া বিশেষ দোয়া
তারাবি না পড়লে রোজা হবে কি
তারাবি না পড়লে রোজা হবে কি? এটির উত্তর হচ্ছে তারাবির সঙ্গে সিয়াম বা রোজার কোন সম্পর্ক নেই। তারাবি একটা ফজিলত এর বিষয়।এই নামাজ সুন্নত আর সিয়াম ফরজ ইবাদত। তবে তারাবির নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এটি সিয়াম এর চেয়ে কোন অংশে কম নয় রাসুল (সা.) বুখারী শরীফের হাদিস এর মধ্যে বলেছেন-
যে ব্যক্তি রমজান মাসের সিয়াম পালন করল ইমরানের সঙ্গে, তার পূর্বের গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন ।হাদিসের মধ্যে রাসুল (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি রমজান মাসে কিয়াম করবে বা সালাতুত তারাবি আদায় করবে পূর্ববর্তী যত গুনাহ আছে আল্লাহ তায়ালা সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন।
তাই রমজান মাসে সিয়ামের যতোটুকু গুরুত্ব রয়েছে ততটুকু তারাবির নামাজের গুরুত্ব রয়েছে। ফজিলত এর দিক থেকে কোন পার্থক্য নেই কিন্তু তারাবির নামাজ যদি কেউ আদায় করে না থাকেন তাহলে তার সিয়াম হবে না বা রোজা হবে না;রোজার ফজিলত থেকে মাহরুম হয়ে যাবেন; এমন বক্তব্য একেবারে সঠিক নয়।
তারাবি কত রাকাত
দ্বিতীয় প্রশ্ন হল তারাবি কত রাকাত। তারাবির নামাজ ২০ রাকাত ও পড়তে পারেন। এটি ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য রয়েছে এবং এ বিষয়ে সাপোর্টে রয়েছেন এবং এর পক্ষে দলিল রয়েছে। সহি হাদিস অনুযায়ী তারাবির নামাজ ২০ রাকাত একইভাবে
আবার সহি হাদিস অনুযায়ী তারাবির নামাজ ৮ রাকাত ও পড়তে পারেন ।৮ রাকাতের বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের ইস্তিহাদ রয়েছে। তারাবির সালাতের বিষয় আপনি যে কথা বলছেন রাসূল (স.) কখনো তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়েন নি এ কথা সত্য বলেছেন ।রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর কোন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে এটি সাব্যস্ত হয় নি রাসুল সালাম সালাম ২০ রাকাত পড়েছেন।
মূলত তারাবির সালাত এক ধরনের নফল সালাত ।এটি নির্দিষ্ট কোনো সালাতের কথা বলা হয়নি। দুই রাকাত করে ৮ রাকাত ১০ রাকাত ১২ রাকাত , ২০ রাকাত, ২৮ রাকাত ,৩০ রাকাত যার যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে তিনি কতটুকু পড়বেন।
তারাবির সালাত মূলত রাতের নামাজ এবং রাতের নামাজের মধ্যে রাসূল (স.) এর নির্দেশনা হচ্ছে-দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করা ।কত রাকাত তা রাসুল সালাম নির্ধারণ করে যাননি ।কেউ যদি ২০ রাকাত পড়তে চান তাহলে পড়তে পারেন কেউ যদি ৮ পড়তে যান তাহলে সেটাও করতে পারেন।
অনেক মসজিদে তারাবির ফতোয়া নিয়ে মারামারিতে মানুষের প্রাণ হরণ পর্যন্ত হয়েছে আল্লাহ আমাদেরকে এসমস্ত ফিতনা থেকেরক্ষা করুক।
তারাবির নিয়ত কিভাবে করব
নিয়ত আরবীতে অথবা আপনার মাতৃভাষা যার যেমন ইচ্ছা সেভাবে নিয়ত করতে পারেন। যারা আরবিতে করতে পারবেন না তাদের জন্য বাংলায় এভাবে করবেন-
আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়ত করছ।আল্লাহু আকবার।
যারা আরবীতে নিয়ত করতে চান তারা এভাবে পড়বেন-
বাংলা উচ্চারণঃ-
নাওয়াইতুয়ান উসালিলয়া লিল্লাহি তাআলা,রাকাআতাই সালতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।
একবার আমাদের দেশের অধিকাংশ মাধ্যমগুলোতে এভাবে আরবীতে নিয়ত শেখানো হয়। যেটি সহীহ সুন্নাহ দ্বারা একেবারে শুদ্ধ ভাবে প্রমানিত নয় এবং এই নিয়ত গুলো কোন দোয়ার অন্তর্ভুক্ত নয় । রাসূল (স.) এটিকে আত্মিক পর্যায়ে রেখেছেন অর্থাৎ; আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন যে আপনি তারাবি সালাত আদায় করতে যাচ্ছেন;ব্যাস হয়ে গেল।
তারাবি কোন সূরা দিয়ে পড়বো
তারাবির সূরার ক্ষেত্রে বলবো ;যে কোন সুন্নত নামাজ বা যেকোনো নফল নামাজ আপনি যেমনটি সূরা ফাতিহার সাথে,ছোট-বড় যে কোন প্রকার অথবা কোন সূরার কমপক্ষে তিনটি আয়াত মিলিয়ে আপনি পড়তে পারেন ।ছোট হলে তিনটি; বড় হলে একটি আয়াতের মাধ্যমে আপনি তারাবি সালাত আদায় করতে পারেন। এতে কোনো বাধা নেই ।পবিত্র কুরআনের যেকোনো কোন সূরা দিয়ে আপনি তারাবি নামাজ পড়তে পারবেন ।
তারাবির নামাজে পড়া বিশেষ দোয়া
সর্বশেষ প্রশ্নটি হচ্ছে তারাবির নামাজে পড়া বিশেষ দোয়া গুলো তারাবির নামাজে পরা বিশেষ দোয়া গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মহিমান্বিত। তারাবির নামাজের চার রাকাত পর পর যে দোয়া গুলো আমরা পড়ি যেমন -
বাংলা উচ্চারণ ঃ-
সুবাহানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানাজিল ইযাতি, ওয়াল আযযাতি, ওয়াল হাইবাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়াই, ওয়াল যাবারুতা। সুবহানাল মালিকিল হাই ইয়াললাজি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ।
প্রতি দুই রাকাত পর সালাম ফিরানোর পর ইস্তেগফার পড়তে হয়,দুরুদ পড়তে হয় । আল্লাহর স্মরণে জিকির করতে হয়। তারপর চার রাকাত হলেই কোরআন হাদিসের দোয়া গুলো পড়তে হয।যে দোয়া গুলো; পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া হয়। কিন্তু আরবিতে যে দোয়াটি বর্তমানে জারি আছে ;এই দোয়াটি কুরআন-হাদীস সম্বলিত নয় ।এটিও কোন এক বুজুর্গ ব্যক্তি লিখে এর প্রচলন করেছেন ,যার অর্থ ভালো বিধায় আমরা পড়ে থাকি।
বাংলা উচ্চারণঃ-
আল্লাহুম্মা ইন্না নাসাআলুকা জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান্নারি,ইয়া খালিকাল জান্নাতা ওয়ান্নারি,বিরহাতিকা,ইয়া আজিজু,ইয়া গাফফারু,ইয়া কারিমু,ইয়া সাত্তারু,ইয়া রাহিমু,ইয়া জাব্বারু,ইয়া খালিকু,ইয়া বার,আল্লাহুমা আযিরনা মিনান্নার;ইয়া মুযিরু,ইয়া মুযিরু,ইয়া মুযির।বিরহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমিন।
চার রাকাত পর এই মোনাজাত করা যায় আবার; একেবারে নামাজ শেষ করে ঐ মোনাজাত করা যায়। তারাবি নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই ,আমরা সবসময় নামাজের ক্ষেত্রে যেসব ধরা পড়ে থাকি এগুলো পড়লেই হয়।তারপরেও বহু পূর্বে কোন বুযুর্গ বর্তমানে তারাবীতে পঠিত দোয়ার প্রচলন করেছেন। যার অর্থ ভালো এবং উত্তম বিধায় আমরা তারাবির নামাজের দোয়া গুলো পড়ে থাকি।
আশা করি তারাবির নামাজে বিশেষভাবে পঠিত দোয়া এর ব্যাপারে আমরা জানতে পেরেছি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক এবং খুশু-খুযুর সাথে রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টিতে একাগ্রচিত্তে রব্বুল আলামীনের দরবারে তারাবির নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন