ইফতারির পূর্বে যে ৫টি ভুল করবেন না- ইফতারের সময় করণীয়

আশা করি রমজানে আপনারা সবাই ভাল আছেন তো। দর্শক রাসূল (সাঃ) বলেছেন রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো; ইফতারের সময় দোয়া কবুল করা হয়। অন্যটি হলো; কিয়ামত দিবসে নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। "সুবহানাল্লাহ আল্লাহ"। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন বলেন হে আমার বান্দারা-রোজা আমার জন্য; আর এর বিনিময় আমি নিজেই ।সুবহানাল্লাহ; একবার ভাবা দরকার তাহলে এই রোজার বিনিময়ে দান করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই।

ইফতারির পূর্বে যে ৫টি  করবেন না- ইফতারের সময় করণীয়

জানেন এটি রব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে হাশরের ময়দানে দান করবেন। "সুবহানাল্লাহ। প্রিয় পাঠক কিন্তু এমন পাঁচটি ভুল আছে; যে পাঁচটি ভুলের কারণে সারাদিনের সব রোজা আমল নামাজ বিফলে চলে যায়। ইফতারির সময় এই পাঁচটি ভুল একবারই করা উচিত না চলুন বিস্তারিত জানা যাক-

সর্বপ্রথম হচ্ছে সঠিক সময় ইফতার করা

শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা আকাশ কালো না হলে ইফতার শুরু করতেন না। কিন্তু ; রাসুল (সাঃ) এর জামানায় শিয়া-সুন্নি ছিল না। তবু রাসূল (সাঃ) আমাদের তাড়াতাড়ি ইফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও খ্রিস্টানরা রোজা রেখে দেরিতে ইফতার করে। তাই তিনি আমাদের তাদের বিরুদ্ধাচারণ করতে আদেশ প্রদান করেছেন।

ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের ফেস্টীং; তথা তাদের যে রীতিনীতিতে রোজা রাখা হয়। তাদের মতো করে আমরা ইফতার করবো না ।আমরা আজান হওয়া মাত্রই সাথে সাথে ইফতার করব। অথচ শিয়া সম্প্রদায়ের ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান এর প্রচলন নির্ধারণ করে চলে। কিন্তু আমাদের নবীজির স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে- "লোকেরা ততক্ষণ থাকবে যতক্ষণ তারা সূর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতার করতে পারবে অর্থাৎ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে সহি বুখারীর 1957 হাদিস"।

তিনি আরো বলেন দিন ততকাল বিজয়ী থাকবে যতকাল লোকেরা ইফতার তাড়াতাড়ি করবে ।অর্থাৎ ;এই পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকবে যতদিন মুসলিমরা রোজার ইফতার তাড়াতাড়ি করবে।এক্ষেত্রে অনেক নিশ্চিত হয়েছেন যে সূর্যাস্ত হয়েছে কিন্তু তার পরেও হতে পারে এমন স্থানে আছেন। যেখানে আযানের শব্দ শোনা যাচ্ছে না কিন্তু তিনি সূর্যাস্ত নিশ্চিত হওয়ার পরেও আযানের অপেক্ষায় বসে থাকেন। 

আবার অনেকে মনে করেন সূর্য ডুবে গেছে কিন্তু মাগরিবেরআজান তো এখনো শুনতে পেলাম না ।তাহলে আমরা কি এখন ইফতার করব ।আবার অনেকে আযান শোনার পরেও ইচ্ছে করেই সর্তকতা অবলম্বন করতে যেয়ে কিছুক্ষণ বিলম্ব করে ফেলেন।রাসুলের সুন্নত অনুযায়ী সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার শুরু করে দেয়া কর্তব্য ।

অনেক লোক দেখা যায় রেডিও টিভির আযান এর জন্য অপেক্ষা করেন ।কিন্তু আমরা অনেকেই ভুলে যাই যে বাংলাদেশের প্রায় সকল টিভি চ্যানেলে আজান হয় ঢাকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী আবার কলকাতায় একই অবস্থা অর্থাৎ কলকাতায় সেখানে স্থানীয় সময় অনুযায়ী আজান হয় যাই হোক এখন আপনি যদি অন্য জেলায় থাকেন যেখানে ঢাকার চাইতে পাঁচ মিনিট পূর্বে ইফতারের সময় হয়ে গেছে।

তাহলে পাঁচ মিনিট দেরি হয়ে গেলে আপনি কিন্তু রাসূলের সুন্নাহ থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলেন সুতরাং মনে রাখবেন আপনাকে আপনার স্থানীয় সময় তা নিশ্চিত হতে হবে অর্থাৎ যে সময়টাতে সূর্য ডুবে যায় সূর্য ডুবে যাওয়া মাত্রই ইফতার করবেন এক্ষেত্রে যদি আযানের শব্দ আপনার কান্নাও আসে তাতেও সমস্যা নেই আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে সূর্যাস্তের সময় সঠিক কিনা ।

আপনি যদি সূর্য ডোবার পরে ও টিভির আযান শোনার জন্য অপেক্ষা করেন তাহলে কিন্তু আপনি বিপদে পড়বেন ।রাসূলের সুন্নাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের হাদিস অনুযায়ী শুধু সঠিক সময় ইফতার না করার কারণে আজীবন পরাজিতদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে । অর্থাৎ দ্বীনকে বিজয়ী রাখার যে আমলটি তাড়াতাড়ি ইফতার করা সেটি থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলেন। 

ইফতার সামনে নিয়ে দোয়া না করে দুনিয়াবী কথা বলা 

ইফতার সামনে নিয়ে দোয়া না করে দুনিয়াবী কথা বলা। আমাদের সমাজে এখন এমন অনেক মানুষ রয়েছে যে ইফতারের কয়েক মিনিট আগে  ইফতারি সামনে নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া না করে মোবাইল ,ফেসবুক ,ইউটিউব ঘাটাঘাটি করে থাকি স্ক্রল করে থাকি। মোবাইল ফোনের যাবতীয় প্রয়োজন অন্তত ইফতারি শুরু হওয়ার 20 মিনিট আগেই শেষ করে ফেলুন ইফতারি সামনে নিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না এটি একদম ঠিক কাজ নয়।

আগে আমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। নিজের মনের কোণে থাকলে তখন আল্লাহকে জানাতে হবে ।কারণ এই সময় আল্লাহ বান্দার প্রতি সদয় হোন ।হাদিসে আছে ইফতারি সামনে নিয়ে বান্দা একটি দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়। "সুবহানাল্লাহ "অথচ আমরা একটু গল্পগুজব অথবা ফেসবুকে সময় কাটায়। খুবই দুঃখজনক; আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে এই কাজটি এখন থেকে আর করবেন না এছাড়া রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেনঃ

ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন ।এছাড়াও আরো বলেছেন ইফতারের সময় কোন দোয়া বাতিল করা হয় না। যখন একজন রোজাদার মুসলমান ইফতারি সামনে নিয়ে আযানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু স্পর্শ করে না। তখন মহান আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের বলেন ;কেন ঈদের সামনে তো খাবার আছে।

ফেরেশতারা উত্তর দেন- হে আল্লাহ ;আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আজ সারাদিন দানাপানি স্পর্শ না করে সংযোগ করে রোজা রেখেছে আর এখন অপেক্ষা করছি আপনার হুকুমের জন্য। অর্থাৎ আযানের জন্য ।যদিও তাদের সামনে অনেক খাবার আছে তারা আপনার হুকুম আজান পেলেই স্পর্শ করবে ।আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের বলেন আমি যখন এদের সৃষ্টি করি তখন তোমরা বলেছিলে এরা কেবল বিভাগ করবে, রক্তপাত করবে।

অথচএরা শুধু আমাকে সন্তুষ্ট করার জন্য সংযোগ করেছে ইফতারি স্পর্শ করছে না। দেখো ফেরেশতারা তোমরা ভুল বলে ছিলে ।তখন ফেরেশতারা নিশ্চুপ থাকবে মহান আল্লাহ বলবেনঃ স্পর্শ করার সাথে সাথে আযানের সাথে সাথে সংযোগ পালনকারীদের সকল চাওয়া পাওয়া মনের ইচ্ছা পূরণ করে দেওয়া হবে। যারা রোজাদার তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে ক্ষমার সুসংবাদ দিয়ে দাও ।তারা যা কল্পনাও করেনি সেই রহমত ও বরকত দিয়ে দাও। সুবহানাল্লাহ - বুখারী শরীফ।

লোক দেখান ইফতার সামগ্রী বিতরণ 

আজকাল আমাদের সমাজের লোক দেখান ইফতার সামগ্রী বিতরণ খুবই পরিলক্ষিত হয় ।আর শত শত মানুষ একসাথে ইফতার সামগ্রী নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় ।।এ ছাড়াও একজন মানুষকে ইফতার সামগ্রী দান করতে গিয়ে ফেসবুকে ছবি উঠিয়ে আবার সেই ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়।

ইফতার যাকে দান করা হলো তাকে সামাজিক অপদস্ত করা হলো ।একবার ভেবে দেখুন আপনি একটি আমল করতে গিয়ে তিনটি ভয়াবহ কবিরা গুনাহ নিয়ে আমলের পাল্লাকে দুর্বল করে বরং গুনাহ এর পাল্লা ভারী করছেন ।এই কাজ করবেন না। দান  গোপনীয়তার সাথে করুন ।আপনাকে যদি প্রকাশ করতে হয় এমন ভাবে করুন যাতে দান গ্রহণকারীদের পরিচয় মানুষ জানতে না পারে ।

আপনি তাদের ছবি উঠে ফেসবুকে ছেড়ে দিলেন এতে আপনি তার মানব অধিকার হরণ করলেন আর এটি ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করেনা ।রাসুল (সাঃ) বলেছেন যদি রমজান মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে তাহলে ইফতার করার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে একটি রোজার সওয়াব পাবে।

বেশি পরিমাণে পানাহার করা

সর্বশেষ ভর্তি হল বেশি পরিমাণে পানাহার করা ইসলামে সমর্থন করা হয় না ।রাসুল (সাঃ) বলেছেন মানুষ যে সকল পূর্ণ করে তার মাঝে মানুষের পেট অপেক্ষা আর কোন খারাপ পাত্র নেই ।মানুষের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমায় যথেষ্ট এর থেকেও বেশি যদি প্রয়োজন হয় তবে এক-তৃতীয়াংশ পানি এর জন্য এবং অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ খালি রাখার জন্য ।আমাদের খেয়াল রাখতে হবে রাতে তো তারাবি পড়তে হবে এখন আপনি যদি এত বেশি ইফতার করেন যে আপনার পেট কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায় তাহলে আপনি ক্লান্ত হয়ে কিয়ামুল লাইলের যে ফজিলত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবেন। তা ছাড়া অতিরিক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ।

চিনিযুক্ত খাবার বা অতিরিক্ত ভাজাপোড়া দিয়ে ইফতার শুরু করা

আরেকটি কমন ভুল হল আমরা সবাই ইফতারী শুরুতেই সর্বদা চিনিযুক্ত খাবার অথবা অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খেয়ে থাকি। কিন্তু এটি মোটেও ঠিক নয় ।কারণ আমাদের উচিত নবীর সুন্নত অনুসরণ করা। নবীর সুন্নত হল ইফতারের শুরুতে মিষ্টি ফল ,বিশেষত্ব খেজুর জাতীয় খাবার দিয়ে ইফতার শুরু করা ।এমনকি ;হালকা খাবার যেমন পানি দেও আপনি শুরু করতে পারেন।

সুতরাং প্রিয় পাঠকগণ আপনারা এই রমজান মাসে ভুলেও উপরে উল্লেখিত পাঁচটি ভুল করবেন না বরং চেষ্টা করবেন ভুল গুলো এড়িয়ে নবী রাসুলের পথ অনুসরণ করে পবিত্র মাহে রমজান মাসে বেশি বেশি ভালো করা । ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url